MCQ practice | Free learning platform

Categories

Posted on 26 Mar, 2022 14:13 pm, category: Islam | Education | Al-Hadis |

প্রতিদান-দিবসের স্বরুপ ও তার প্রয়োজনীয়তা

প্রথমতঃ প্রতিদান দিবস কাকে বলে এবং এর স্বরূপ কি? দ্বিতীয়তঃ সমগ্র সৃষ্টির উপর প্রতিদান দিবসে যেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলার একক অধিকার থাকবে, অনুরূপভাবে আজও সকল কিছুর উপর তাঁরই তাে একক অধিকার রয়েছে; সুতরাং প্রতিদান দিবসের বৈশিষ্ট্য কোথায়?

প্রথম প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে এই যে, প্রতিদান দিবস সে দিনকেই বলা হয়, যেদিন আল্লাহ্ তা‘আলা ভাল-মন্দ সকল কাজ-কর্মের প্রতিদান দেবেন বলে ঘােষণা করেছেন। রােযে-জাযা শব্দ দ্বারা বােঝান হয়েছে যে, দুনিয়া ভাল-মন্দ কাজ-কর্মের প্রকৃত ফলাফল পাওয়ার স্থান নয়; বরং এটি হল কর্মস্থল; কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনের জায়গা। যথার্থ প্রতিদান বা পুরস্কার গ্রহণেরও স্থান এটা নয়। এতে একথাও বুঝা যাচ্ছে যে, পৃথিবীতে কারও অর্থ-সম্পদের আধিক্য ও সুখ-শান্তির ব্যাপকতা দেখে বলা যাবে না যে, এ লােক আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছেন বা তিনি আল্লাহর প্রিয়পাত্র। অপর পক্ষে কাকেও বিপদাপদে পতিত দেখেও বলা যাবে না যে, তিনি আল্লাহর অভিশপ্ত। যেমনি করে কর্মস্থলে বা কারখানার কোন কোন লােককে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে ব্যস্ত দেখে কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি তাকে বিপদগ্রস্ত বলে ভাবে না; বরং সে এ ব্যস্ততাকে জীবনের সাফল্য বলেই গণ্য করে এবং যদি কেহ অনুগ্রহ করে তাকে এ ব্যস্ততা থেকে রেহাই দিতে চায়, তবে তাকে সে সবচেয়ে বড় ক্ষতি বলে মনে করে। সে তার এ ত্রিশ দিনের পরিশ্রমের অন্তরালে এমন এক আরাম দেখতে পায়, যা তার বেতনম্বরূপ সে লাভ করে।

    এ জন্যই নবীগণ এ দুনিয়ার জীবনে সর্বপেক্ষা বেশী বিপদাপদে পতিত হয়েছেন এবং তারপর ওলী-আওলিয়াগণ সবচেয়ে অধিক বিপদে পতিত হন। কিন্তু দেখা গেছে, বিপদের তীব্রতা যত কঠিনই হােক না কেন, দৃঢ়পদে তারা তা সহ্য করেছেন। এমনকি আনন্দিত চিত্তেই তারা তা মেনে নিয়েছেন। মােটকথা, দুনিয়ার আরাম আয়েশকে সত্যবাদিতা ও সঠিকতা এবং বিপদাপদকে খারাপ কাজের নিদর্শন বলা যায় না।

অবশ্য কখনাে কোন কোন কর্মের সামান্য ফলাফল দুনিয়াতেও প্রকাশ করা হয় বটে, তবে তা সেকাজের পূর্ণ বদলা হতে পারে না। এগুলাে সাময়িকভাবে সতর্ক করার জন্য একটু নিদর্শন মাত্র।

 বাক্যটিতে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এই যে, বুদ্ধিমান ব্যক্তিমাত্রই একথা জানেন যে, সেই একক সত্তাই প্রকৃত মালিক, যিনি সমগ জগতকে সৃষ্টি করেছেন এবং এর লালন-পালন ও বর্ধনের আমি গ্রহণ করেছেন এবং যাঁর মালিকানা পূর্ণরূপে প্রত্যেক বস্তুর মধ্যেই সর্বাবস্থায় পরিব্যাপ্ত। অর্থাৎ— প্রকাশ্যে, গোপনে, জীবিতাবস্থায় ও মৃতাবস্থায় এবং যার মালিকানার আরম্ভ নেই, শেষও নেই। এ মালিকানার সাথে মানুষের মালিকানা তুলনাযোগ্য নয়।কেননা, মানুষের মালিকানা আরম্ভ ও শেষের চৌহদ্দীতে সীমাবদ্ধ। এক সময় তা ছিল না কিছুদিন পৱেই তা থাকবে না। অপরদিকে মানুষের মালিকানা হস্তান্তরযােগ্য। বস্তুর বাহ্যিক দিকের উপরই বর্তায়; গােপনীয় দিকের ওপর নয়। জীবিতের ওপর; মৃতের ওপর নয়। এজন্যই প্রকৃত প্রস্তাবে আল্লাহ তা‘আলার মালিকানা কেবলমাত্র প্রতিদান দিবসেই নয়, বরং পৃথিবীতেও সমস্ত সৃষ্টজগতের প্রকৃত মালিক অল্লাহ তাআলা। তবে এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার মালিকানা বিশেষভাবে প্রতিদান দিবসের এ কথা বলার তাৎপর্য কি? আল-কোরআনের অন্য আয়াতের প্রতি লক্ষ করলেই বােঝা যায় যে, যদিও দুনিয়াতেও প্রকৃত মালিকানা আল্লাহ তা‘আলারই, কিন্তু তিনি দয়াপরবশ হয়ে আংশিক বা ক্ষণস্থায়ী মালিকানা মানবজাতিকেও দান করেছেন এবং পার্থিব জীবনের আইনে এ মালিকানার প্রতি সম্মানও দেখানাে হয়েছে। বিশ্বচরাচরে মানুষ ধন-সম্পদ, জায়গা-জমি, বাড়ী-ঘর এবং আসবাবপত্রের ক্ষণস্থায়ী মালিক হয়েও এতে একেবারে ডুৰে রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা  একথা ঘােষণা করে এ অহংকারী ও নির্বোধ মানব-সমাজকে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, তােমাদের এ মালিকানা, আধিপত্য ও সম্পর্ক মাত্র কয়েক দিনের এবং ক্ষণিকের। এমন দিন অতি সত্বরই আসছে, যে দিন কেউই জাহেরী মালিকও থাকবে না, কেউ কারাে দাস বা কেউ কারাে সেবা পাবার উপযােগীও থাকবে না। সমস্ত বস্তুর মালিকানা এক ও একক সত্তার হয়ে যাবে। |

সূরা আল-ফাতিহার প্রথমে বর্ণনা করা হয়েছে যে, এ সূরার প্রথম তিনটি আয়াতে আল্লাহর প্রশংসা ও তারীফের বর্ণনা করা হয়েছে এবং এর তফসীরে একথা সুস্পষ্ট হয়েছে যে, তা’রীফ ও প্রশংসার সাথে সাথে ঈমানের মৌলিক নীতি ও আল্লাহর একত্ববাদের বর্ণনাও সূক্ষ্মভাবে দেয়া হয়েছে।

      তৃতীয় আয়াতের তফসীরে আপনি অবগত হলেন যে, এর দু’টি শব্দে তারীফ ও প্রশংসার সাথে সাথে ইসলামের বিপ্লবাত্মক মহােত্তম আকীদা যথা কিয়ামত ও পরকালের বর্ণনা প্রমাণসহ উপস্থিত করা হয়েছে।

   এখন চতুর্থ আয়াতের বর্ণনাঃ  এ আয়াতের এক অংশে তা’রীফ ও প্রশংসা এবং অপর অংশে দোয়া ও প্রর্থনা।  শব্দ থেকে গঠিত। এর অর্থ হচ্ছে। কারাে প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা ও ভালবাসার দরুন তাঁর নিকট নিজের আন্তরিক কাকুতি-মিনতি প্রকাশ করা।   হতে গঠিত। এর অর্থ হচ্ছে কারাে সাহায্য প্রার্থনা করা। আয়াতের অর্থ হচ্ছে, আমরা তােমারই ইবাদত করি এবং একমাত্র তােমার নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করি। মানবজীবন তিনটি অবস্থায় অতিবাহিত হয়। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত। পূর্বের তিনটি আয়াতের মধ্যে  এবং  এ দু’টি আয়াতে মানুষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, অতীতে সে কেবল মাত্র আল্লাহ তাআলার মুখাপেক্ষী ছিল, বর্তমানেও সে একমাত্র তাঁরই মুখাপেক্ষী। অস্তিত্বহীন এক অবস্থা থেকে তিনি অস্তিত্ব দান করেছেন।

 

      আজ সকল সকল সৃষ্টির মধ্যে সর্বাপেক্ষা সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর আকার-আকৃতি, বিবেক ও বুদ্ধি দান করেছেন। বর্তমানে তার লালন-পালন ও ভরণ-পোষণের নিয়মিত সুব্যবস্থাও তিনিই করেছেন। অতঃপর -এর মধ্যে জানিয়ে নেয়া হয়েছে যে, ভবিষ্যতেও সে আল্লাহ্ তা‘আলারই মুখাপেক্ষী। প্রতিদান দিবসে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো সাহায্য পাওয়া যাবে না। ভবিষ্যতেও সে আল্লাহ তাআলারই মুখপেক্ষী। প্রতিদান দিবসে আলাহ আনীত অন্য কারাে সাহায্য পাওয়া যাবে না।

       প্রথম তিনটি আয়াত দ্বারা যখন একথা প্রমাণিত হলাে যে, মানুষ তার জীবনের তিনটি কালেই একান্তভাবে  আল্লাহর মুখাপেক্ষী, তাই সাধারণ মুক্তির চাহিদাও এই যে, ইবাদতও তাঁরই করতে হবে। কেননা, ইবাদত যেহেতু অশেষ শ্রদ্ধা ও ভালােবাসার সাথে নিজের অফুরন্ত কাকুতি-মিনতি নিবেদন করার নাম, সুতরাং তা পাওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন অন্য কোন সত্তা নেই। ফলকথা এই যে, একজন বুদ্ধিমান ও বিবেকবান ব্যক্তি মনের গভীরতা থেকেই এ স্বতঃস্ফূর্ত স্বীকৃতি উচ্চারণ করছে যে, আমরা তোমাকে ব্যতীত অন্য কারাে ইবাদত করি না। এ মৌলিক চাহিদাই  তে বর্ণনা করা হয়েছে।

         

        যখন স্থির হলাে যে, অভাব পূরণকারী একক সত্তা আল্লাহ্ তা'আলা, সুতরাং নিজের যাবতীয় কাজে সাহায্যও তাঁর নিকটই প্রার্থনা করবে। এ মৌলিক চাহিদারই বর্ণনা  করা হয়েছে। মােটকথা, এ চতুর্থ আয়াতে একদিকে আল্লাহ্-র  তা‘রীফ ও প্রশংসার সাথে একথারও স্বীকৃতি রয়েছে যে, ইবাদত ও শ্রদ্ধা পাওয়ার একমাত্র তিনিই যােগ্য। অপরদিকে তাঁর নিকট সাহায্য ও সহায়তার প্রার্থনা করা এবং তৃতীয়তঃ আলহ ব্যতীত অন্য কারাে ইৰাদত না করার শিক্ষাও দেয়া হয়েছে। এতদসঙ্গে এও বলে দেয়া হয়েছে যে, কোন বান্দাই আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাকেও অভাব পূণকারী মনে করবে না। অপর কারাে নিকট প্রার্থনার হাত প্রসারিত করা যাবে না। অবশ্য কোন নবী বা কোন ওলীর বরাত দিয়ে প্রার্থনা করা আয়াতের মর্মবিরােধী নয়।

       এ আয়াতে এ বিষয়ও চিন্তা করা কর্তব্য যে, ‘আমরা তােমারই দিক সাহায্য চাই।‘ কিন্তু কোন্ কাজের সাহায্য চাই, তার কোন উল্লেখ নে। জ‘মহুর মুফাসসিরীনের অভিমত এই যে, নির্দিষ্ট কোন ব্যাপারে সাহায্যের উল্লেখ না করে আ’ম ৰা সাধারন সাহায্যের প্রতি ইশারা করা হয়েছে যে, আমি আমার ইবাদত এবং প্রত্যেক ধর্মীয় ও পার্থিব কাজে এবং অন্তরে পোষিত প্রতিটি আশা-আকাঙ্খায় কেবল তােমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।

     শুধু নামায রোযারই নাম ইবাদত নয়। ইমাম গাযযালী স্বীয় গ্রন্থ আরবাইন-এ দশ প্রকার ইবাদতের কথা লিখেছেন। যথা - নামায, যাকাত, রোযা, কোরআন তিলাওয়াত, সর্বাবস্থায় আল্লাহর স্মরণ, হালাল উপার্জনের চেষ্টা করা, প্রতিবেশী এবং সাথীদের প্রাপ্য পরিশােধ করা, মানুষকে সৎ কাজের আদেশ ও খারাপ কাজ হতে বিরত থাকার উপদেশ দেয়া, রসূলের সুন্নত পালন করা।

   একই কারণ ইবাদতে আল্লাহর সাথে কাকেও অংশীদার করা চলে না। এর অর্থ হচ্ছে, কারো প্রতি ভালবাসা, আল্লাহর প্রতি ভালবাসার সমতুল্য হবে না। কারো প্রতি ভয়,  কারো তার আশা-আকাঙ্খা পোশণ আল্লাহ্র ভয় ও তাঁর প্রতি পোশিত আশা-আকাঙ্খার সমতুল্য হবে না। আবার কারাে ওপর একান্ত ভরসা করা, কারাে আনুগত্য ও খেদমত করা, কারো কাজকে আল্লাহর ইবাদতের সমতুল্য আবশ্যকীয় মনে করা, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারাে নামে মানত করা, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারাে সামনে স্বীয় কাকুতি-মিনতি প্রকাশ করা এবং যে কাজে অন্তরের আবেগ-আকুতি প্রকাশ পায়, এমন কাজ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারাে জন্য করা- যথা রুকূ বা সেজদা করা ইত্যাদি কোন অবস্থাতেই বৈধ হবে না।

        শেষ তিনটি আয়াতে মানুষের দোয়া ও আবেদনের বিষয়বস্তু এবং এক বিশেষ প্রার্থনাপদ্ধতি শিক্ষা দেয়া হয়েছে। তা হচ্ছে —

 

        অর্থাৎ, 'আমাদিগকে সরল পথ দেখাও, সে সমস্ত মানুষের পথ, যারা তােমার অনুগ্রহ লাভ করেছে। যে পথে তােমার অভিশপ্ত বান্দারা চলেছে সে পথ নয় এবং ঐ সমস্ত লােকের রাস্তাও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।’

 

        এ তিনটি আয়াতে কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। যেমন, সরল পথের হেদায়েতের জন্য যে আবেদন এ আয়াতে শিক্ষা দেয়া হয়েছে, এর আবেদনকারী যেমনিভাবে সাধারণ মানুষ, সাধারণ মুমিনগণ, তেমনি আওলিয়া, গাউস-কুতুব এবং নবী-রসূলগণও বটে। নিঃসন্দেহে যাঁরা হেদায়েত প্রাপ্ত, বরং অন্যের হেদায়েতের উৎসস্বরূপ, তাঁদের পক্ষে পুনরায় সে হেদায়েতের জন্যই বারংবার প্রার্থনা করার উদ্দেশ্য কি ? এ প্রশ্নের উত্তর হেদায়েত শব্দের তাৎপর্য পরিপূর্ণরূপে অনুধাবন করার ওপর নির্ভরশীল।

       ইমাম রাগেব ইস্-ফাহানী ‘মুফরাদাতুল-কোরাআনে’ হেদায়েত শব্দের অতি সুন্দর ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। এর সারমর্ম হচ্ছে- ‘কাউকে গন্তব্যস্থানের দিকে অনুগ্রহের সাথে পথ প্রদর্শন করা। তাই হেদায়েত করা প্রকৃত প্রস্তাবে একমাত্র আল্লাহ তা'আলারই কাজ এবং এর বিভিন্ন স্তর রয়েছে। হেদায়েতের একটি স্তর হচ্ছে সাধারণ ও ব্যাপক। এতে সমগ্র সৃষ্টি অন্তর্ভুক্ত। জড়পদার্থ, উদ্ভিদ এবং প্রাণী জগৎ পর্যন্ত এর আওতাধীন। প্রসঙ্গতঃ প্রশ্ন উঠতে পারে যে, প্রাণহীন জড়পদার্থ বা ইতর প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের সঙ্গে হেদায়েতের সম্পর্ক কোথায় ?

        কোরআনের শিক্ষায় স্পষ্টতঃই এ তথ্য ব্যক্ত হয়েছে যে, সৃষ্টির প্রতিটি স্তর, এমনকি প্রতিটি অণু-পরমাণু পর্যন্ত নিজ নিজ অবস্থানুযায়ী প্রাণ ও অনুভূতির অধিকারী। স্ব-স্ব পরিমণ্ডলে প্রতিটি বস্তুর বুদ্ধি-বিবেচনা রয়েছে। অবশ্য এ বুদ্ধি ও অনুভূতির তারতম্য রয়েছে। কোনটাতে তা স্পষ্ট এবং কোনটাতে নিতান্তই অনুল্লেখ্য।  যে সমস্ত বস্তুতে তা অতি অল্পমাত্রায় বিদ্যমান সেগুলােকে প্রাণহীন বা অনুভূতিহীন বলা যায়। বুদ্ধি ও অনুভূতির ক্ষেত্রে এ তারতম্যের জন্যই সমগ্র সৃষ্টিজগতের মধ্যে একমাত্র মানুষ ও জ্বিন জাতিকেই শরীয়তের হুকুম-আহকামের আওতাভূক্ত করা হয়েছে। কারণ, সৃষ্টির এ দু'টি স্তরের মধ্যেই বুদ্ধি ও অনুভূতি পূর্ণ মাত্রায় দেয়া হয়েছে। কিন্তু, তাই বলে একথা বলা যাবে না যে, একমাত্র মানুষ ও জ্বিন জাতি ছাড়া সৃষ্টির অন্য কোন কিছুর মধ্যে বুদ্ধি  ও অনুভূতির অস্তিত্ব নেই। কেননা, আল্লাহ তা আল্য এরশাদ করেছেনঃ

 

 

      অর্থাৎ- এমন কোন বস্তু নেই যা আল্লাহর প্রশংসার তসবীহ পাঠ করে না, কিন্তু তােমরা তাদের তসবীহ বুঝতে পার না। (সূরা বন-ইসরাঈল)

       সূরা নূরে এরশাদ হয়েছে।

 

 

      অর্থাৎ, – 'তােমরা কি জান না যে, আসমান-জমিনে যা কিছু রয়েছে, সকলেই আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা ও গুণগান করে ? বিশেষতঃ পাখীকুল যারা দু’পাখা বিস্তার করে শূন্যে উড়ে বেড়ায়, তাদের সকলেই স্ব-স্ব দোয়া তসবীহ সম্পর্কে জ্ঞাত এবং আল্লাহ্ তা'আলাও ওদের তসবীহ সম্পর্কে খবর রাখেন।'

     একথা সর্বজনবিদিত যে, আল্লাহ তা`আলার পরিচয়ের ওপরই তাঁর তারীফ ও প্রশংসা নির্ভরশীল। আর এ কথাও স্বতঃসিদ্ধ যে, আল্লাহর পরিচয় লাভ করাই সর্বাপেক্ষা বড় জ্ঞান। এটা বুদ্ধি-বিবেক ও অনুভূতি ব্যতীত সম্ভব নয়। কোরআনের অন্যান্য আয়াত দ্বারাও প্রমাণিত হয়েছে যে, সৃষ্টিজগতের প্রতিটি বস্তুরই প্রাণ ও জীবন আছে এবং বুদ্ধি ও অনুভূতি রয়েছে। তবে কোন কোনটির মধ্যে এর পরিমাণ এত অল্প যে, সাধারণ দৃষ্টিতে তা অনুভব করা যায় না। তাই পরিভাষাগতভাবে ওগুলােকে প্রাণহীন ও বুদ্ধিহীন জড়পদার্থ বলা হয়। আর এ জন্যেই ওদেরকে শর`য়ী আদেশের আওতাভুক্ত করা হয়নি। গােটা বস্তুজগত সম্পর্কিত এ মীমাংসা আল-কোরআনে সে যুগেই দেয়া হয়েছিল, যে যুগে পৃথিবীর কোথায়ও আধুনিক-কালের কোন দার্শনিকও ছিল না, দর্শনবিদ্যার কোন পুস্তকও রচিত হয়নি। পরবর্তী যুগের দার্শনিকগণ এ তথ্যের যথার্থতা স্বীকার করেছেন এবং প্রাচীন দার্শনিকদের মধ্যেও এ মত পােষণ করার মত অনেক লােক ছিল। মােটকথা, আল্লাহর হেদায়েতের এ প্রথম স্তরে। সমস্ত সৃষ্টিজগত— যথা–জড় পদার্থ, উদ্ভিদ, প্রাণীজগৎ, মানবমন্ডলী ও জ্বিন প্রভৃতি সকলেই অন্তর্ভুক্ত। এ সাধারণ হেদায়েতের উল্লেখই আল-কোরআনের  আয়াতে করা হয়েছে।

       অর্থাৎ, যিনি সমস্ত সৃষ্টিজগতের জন্য বিশেষ অভ্যাস এবং বিশেষ বিশেষ দায়িত্ব নির্ধারণ করেছেন এবং সে মেযাজ ও দায়িত্বের উপযােগী হেদায়েত দান করেছেন। এ ব্যাপারে হেদায়েতের পরিকল্পনা অনুযায়ী সৃষ্টিজগতের প্রতিটি বস্তুই অতি নিপুণভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে চলেছে। যে বস্তুকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, সে সেই কাজ অত্যন্ত গরুত্ব ও নৈপূণ্যের সাথে পালন করছে। যথা – মুখ হতে নির্গত শব্দ নাক বা চক্ষু কেউই শ্রবণ করতে পারে না, অথচ এ দু’টি মুখের নিকটতম অঙ্গ। পক্ষান্তরে এ দায়িত্ব আল্লাহ্ তা’আলা যেহেতু কানকে অর্পণ করেছেন, তাই একমাত্র কানই মুখের শব্দ শ্রবণ করে ও বোঝে। অনুরুপভাবে কান দ্বারা দেখা বা ঘ্রাণ নেওয়ার কাজ করা চলে না। 

 

হেদায়েতের দ্বিতীয় স্তর এর তুলনায় অনেকটা সংকীর্ণ। অর্থাৎ সে সমস্ত বস্তুর সাথে জড়িত, পরিভাষায় যাদেরকে বিবেকবান বুদ্ধিসম্পন্ন বলা হয়। অর্থাৎ – মানুষ এবং জ্বিন জাতি।  এ হেদায়েত নবী-রাসুল ও আসমানী কিতাবের মাধ্যমে প্রত্যেক মানুষের নিকট পৌছেছে। কেউ এ হেদায়েতকে গ্রহণ করে মুমিন হয়েছে আবার কেউ একে প্রত্যাখান করে কাফির- বে-দ্বীনে পরিণত হয়েছে।

     হেদায়েতের তৃতীয় স্তর আরো বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। তা শুধু মু’মিন ও মুত্তাকী বা ধর্মভীরুদের জন্য। এ হেদায়েত আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে কোন প্রকাশ মাধ্যম ব্যতীতই মানুষকে প্রদান করা হয়। এরই নাম তওফীক । অর্থাৎ, এমন অবস্থা, পরিবেশ ও মনােভাব সৃষ্টি করে দেয়া যে, তার ফলে কোরআনের হেদায়েতকে গ্রহণ করা এবং এর উপর আমল করা সহজসাধ্য হয় এবং এর বিরুদ্ধাচরণ কঠিন হয়ে পড়ে। এ তৃতীয় স্তরের পরিসীমা অতি ব্যাপক। এ স্তরই মানবের উন্নতির ক্ষেত্র। নেক- কজের সাথে এ হেদায়েতের বৃদ্ধি হতে থাকে । কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে এ বৃদ্ধির উল্লেখ রয়েছে ঃ

 

       অর্থাৎ – 'যারা আমার পথে অগ্রসর হওয়ার চষ্টা করে, আমি তাদেরকে আমার পথে আরাে অধিকতর অগ্রসর হওয়ার পর অবশ্যই দেখিয়ে থাকি।’ এটি সেই কর্মক্ষেত্র যেখানে নবী-রসূল এবং বড় বড় ওলী-আওলিয়া, কুতুবগণকেও জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আরো অধিকতর হেদায়েত ও তওফীকের জন্য চেষ্টায় রত থাকতে দেখা গেছে।

        হেদায়েতের এ ব্যাখ্যার দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝা গেল যে, হেদায়েত এমন এক বন্তু যা সকলেই লাভ করেছে এবং এর আধিক্য লাভ করার জন্য বড় হতে বড় ব্যক্তির পক্ষেও কোন বাধা-নিষেধ নেই। এজন্যই সূরা আল-ফাতেহায় গুরুত্বপূর্ণ দোয়ারূপে হেদায়েত প্রার্থনা শিক্ষা দেয়া হয়েছে। যা একজন সাধারণ মুমিনের জন্যও উপযোগী, আবার একজন বড় হতে বড় রসূলের জন্যও উপযোগী। এজন্যই হযরত রসূলে আকরাম (সাঃ)-এর শেষ জীবনে সূরা ফাতাহ্তে মক্কা বিজয়ের ফলাফল বর্ণনা করতে গিয়ে একথাও বলা হয়েছে যে,


       অর্থাৎ, মক্কা বিজয় এজন্যই আপনার দ্বারা সম্পন্ন করা হয়েছে, যাতে সিরাতে-মুস্তাকীমের হেদায়েত লাভ হয়।

       রসূলুল্লাহ (সাঃ) কেবল নিজেই হেদায়েতপ্রাপ্ত ছিলেন না; বরং অন্যের জন্যও ছিলেন হেদায়েতের উৎস। এমতাবস্থায় তাঁর হেদায়েত লাভের একমাত্র অর্থ হতে পারে, এ সময় হেদায়েতের কোন উচ্চতর অবস্থা তিনি লাভ করেছেন।

       হেদায়েতের এ ব্যাখ্যা পবিত্র কোরআন বুঝবার ক্ষেত্রে যে সব ফায়দা প্রদান করবে সংক্ষেপে তা নিম্নরূপঃ

(এক) পবিত্র কোরআনের কোথাও কোথাও মুমিন ও কাফের নির্বিশেষে সবার জনাই হেদায়েত শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। আবার কোথাও শুধুমাত্র মুত্তাকীদের জন্য বিশেষ অর্থে হেলায়েত শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এতেকরে অজ্ঞ লোকদের পক্ষে সন্দেহে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় কিন্তু হেদায়েতের সাধারণ ও বিশেষ স্তরসমুহ জানার পর এ সন্দেহ আপন-আপনিতেই দূরীভূত হয়ে যাবে। বুঝতে হবে যে, করো বেলায় ব্যাপক অর্থে এবং কারো বেলায় বিশেষ অর্থে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।

 

       (দুই) আল-কোরআনের বিভিন্ন স্থানে এরশাদ হয়েছে যে, যালেম ও ফাসেকদিগকে আল্লাহ্ তা‘আলা হেদায়েত দান করেন না। অন্যত্র বারবার এরশাদ হয়েছে যে, তিনি সকলকেই হেদায়েত দান করেন। এর উত্তরও হেদায়েতের স্তরসমূহের বর্ণনা প্রসঙ্গে বলে দেয়া হয়েছে যে, হেদায়েতের ব্যাপক অর্থে সকলেই হেদায়েপ্রাপ্ত এবং বিশেষ অর্থে জালেম ও ফাসেকরা বাদ পড়েছে।

          (তিন) হেদায়েতের তিনটি স্তরের মধ্যে প্রথম ও তৃতীয় স্তর সরাসরি আল্লাহ তা'আলার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ পর্যায়ের হেদায়েত একান্তভাবে একমাত্র তাঁরই কাজ। এতে নবী-রসূলগণেরও কোন অধিকার নেই। নবী-রসূলগণের কাজ শুধু হেদায়েতের দ্বিতীয় স্তরে সীমিত। কোরআনের যেখানে যেখানে নবী-রসূলগণকে হেদায়েতকারী বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তা হেদায়েতের দ্বিতীয় স্তরের ভিত্তিতেই বলা হয়েছে। আর যেখানে এরশাদ হয়েছে :

    অর্থাৎ, আপনি যাকে চাইবেন তাকেই হেদায়েত করতে পারবেন না – এতে হেদায়েতের তৃতীয় স্তরের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ, কাউকে তওফীক দান করা আপনার কাজ নয়।

       মােটকথা ,  একটি ব্যাপক ও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দোয়া, যা মানুষকে শিক্ষা দেয়া হয়েছে। মানবসমাজের কোন ব্যক্তিই এর আওতার বাইরে নেই। কেননা, সরল-সঠিক পথ ব্যতীত দ্বীন-দুনিয়া কোনটিরই উন্নতি ও সাফল্য সম্ভব নয়। দুনিয়ার আবর্তন-বিবর্তনের মধ্যেও সিরাতে-মুস্তাকীমের প্রার্থনা পরশপাথরের ন্যায়, কিন্তু মানুষ তা লক্ষ্য করে না। আয়াতের অর্থ হচ্ছে  — ‘আমাদিগকে সরল পথ দেখিয়ে দিন।`

     সরল পথ কোনটি? ‘সােজা সরল রাস্তা’ সে পথকে বলে, যাতে কোন মােড় বা ঘােরপ্যাঁচ নেই। এর অর্থ হচ্ছে, ধর্মের সে রাস্তা যাতে ‘ইফরাত বা ‘তফরীত এর-অবকাশ নেই। ইফরাতের অর্থ সীমা অতিক্রম করা এবং তফরীত অর্থ মর্জিমত কাট-ছাট করে নেয়া। এরশাদ হয়েছে ঃ

     অর্থাৎ, যে সকল লােক আপনার অনুগ্রহ লাভ করেছে তাদের রাস্তা। যে সকল ব্যক্তি আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করেছে, তাদের পরিচয় অন্য একটি আয়াতে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছেঃ

      অর্থাৎ – যাদের প্রতি আল্লাহ্ পাক অনুগ্রহ করেছেন, তাঁরা হচ্ছেন, নবী, সিদ্দীক, শহীদ এবং সৎকর্মশীল সালেহীন। আল্লাহ্‌র দরবারে মকবুল উপরােক্ত লােকদের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তর নবীগণের। অতঃপর নবীগণের উম্মতের মধ্যে যাঁরা সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী, তাঁরা হলেন সিদ্দীক। যাদের মধ্যে রূহানী কামালিয়াত ও পরিপূর্ণতা রয়েছে, সাধারণ ভাষায় তাদেরকে ‘আওলিয়া’ বলা হয়। আর যাঁরা দ্বীনের প্রয়োজনে স্বীয় জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করেছেন, তাঁদেরকে বলা হয় শহীদ। আর সালেহীন হচ্ছেন যাঁরা ওয়াজীব মুস্তাহব প্রভুতি সর্বক্ষেত্রে শরীয়তের পুরোপুরি অনুসরণ ও আমলকারী। সাধারণ পরিভাষায় এঁদেরকে দ্বীনদার বলা হয়।

 

     এ আয়াতের প্রথম অংশে ইতিবাচক বাক্য ব্যবহার করে সরল পথের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। উপরোক্ত চার স্তরের মানুষ যে পথ চলেছেন তাই সরল পথ। পরে শেষ  আয়াতে নেতিবাচক বাক্য ব্যবহার করেও এর সমর্থন করা হয়েছে। বলা হয়েছে ঃ

 

         অর্থাৎ, যারা আপনার অভিসম্পতগ্রস্ত তাদের পথ নয় এবং তাদের পথও নয়, যারা পথহারা হয়েছে।

 বলতে ঐ সকল লােককে বুঝানাে হয়েছে, যারা ধর্মের হুকুম-আহ্কামকে বুঝে-জানে, তবে স্বীয় অহমীকা ও ব্যক্তিগত স্বার্থের বশবর্তী হয়ে বিরুদ্ধাচরণ করেছে। যাঁরা আল্লাহ্ তা‘আলার আদেশ মান্য করতে গাফলতি করেছে। যেমন, সাধারণভাবে ইহুদীদের নিয়ম ছিল, সামান্য স্বার্থের জন্য দ্বীনের নিয়ম নীতি বিসর্জন দিয়ে তারা নবী-রসূলগণের অবমাননা পর্যন্ত করতে দ্বিধাবােধ করত না।

  - তাদেরকে বলা হয়, যারা না বুঝে অজ্ঞতার দরুন ধর্মীয় ব্যাপারে ভুল পথের অনুসারী হয়েছে এবং ধর্মের সীমালম্বন করে অতিরঞ্জনের পথে অগ্রসর হয়েছে। যথা-নাসারাগণ। তারা নবীর শিক্ষাকে অগ্রাধিকার প্রদানের নামে এমনি বাড়াবাড়ি করেছে যে, নবীদিগকে আল্লাহর স্থানে উন্নীত করে দিয়েছে। ইহুদীদের বেলায় এটা অন্যায় এজন্য যে, তারা আল্লাহ্-র নবীদের কথা মানেনি; এমনকি তাঁদেরকে হত্যা পর্যন্ত করেছে। অপরদিকে নাসারাগণের বেলায় অতিরঞ্জন হচ্ছে এই যে, তারা নবীদিগকে আল্লাহর পর্যায়ে পৌছিয়ে দিয়েছে।

আয়াতের সারমর্ম হচ্ছে- আমরা সে পথ চাই না, যা নফসানী উদ্দেশের অনুগত হয় এবং মন্দ কাজে উদ্বুদ্ধ করে ও ধর্মের মধ্যে সীমালঙ্ঘনের প্রতি প্ররােচিত করে। সে পথও চাই না, যে পথ অজ্ঞতা ও মুর্খতার দরুন ধর্মের সীমারেখা অতিক্রম করে এবং এ দু‘য়ের মধ্যবর্তী সােজা-সরল পথ চাই যার মধ্যে না অতিরঞ্জন আছে, আর না কম-কছুরী আছে এবং যা নফসানী প্রভাব ও সংশয়ের উর্ধ্বে।

সূরা আল-ফাতেহার আয়াত সাতটির তফসীর শেষ হয়েছে। এখন সমগ্র সূরার সারমর্ম হচ্ছে এই দোয়া- ‘হে আল্লাহ্! আমাদিগকে সরল পথ দান করুন। কেননা, সরল পথের সন্ধান লাভ করাই সবচাইতে বড় জ্ঞান ও সর্বাপেক্ষা বড় কামিয়াবী। বস্তুতঃ সরল পথের সন্ধানে ব্যর্থ হয়েই দুনিয়ার বিভিন্ন জাতি ধ্বংস হয়েছে। অন্যথায় অ-মুসলমানদের মধ্যেও সৃষ্টিকর্তার পরিচয় লাভ করা এবং তাঁর সন্তুষ্টির পথ অনুসরণ করার আগ্রহ-আকৃতির অভাব নেই। এজন্যই কোরআন পাকে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় পদ্ধতিতেই সিরাতে-মুস্তাকীমের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে।

 

তথ্যসূত্র ঃ


Copy Link to Share:
https://www.mcqpractice.com/auth/index.php?page=../proverbs/article-details.php&id=81&t=প্রতিদান-দিবসের-স্বরুপ-ও-তার-প্রয়োজনীয়তা

Posted on 26 Mar, 2022 14:13 pm, Category:

প্রতিদান-দিবসের স্বরুপ ও তার প্রয়োজনীয়তা

প্রথমতঃ প্রতিদান দিবস কাকে বলে এবং এর স্বরূপ কি? দ্বিতীয়তঃ সমগ্র সৃষ্টির উপর প্রতিদান দিবসে যেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলার একক অধিকার থাকবে, অনুরূপভাবে আজও সকল কিছুর উপর তাঁরই তাে একক অধিকার রয়েছে; সুতরাং প্রতিদান দিবসের বৈশিষ্ট্য কোথায়?

প্রথম প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে এই যে, প্রতিদান দিবস সে দিনকেই বলা হয়, যেদিন আল্লাহ্ তা‘আলা ভাল-মন্দ সকল কাজ-কর্মের প্রতিদান দেবেন বলে ঘােষণা করেছেন। রােযে-জাযা শব্দ দ্বারা বােঝান হয়েছে যে, দুনিয়া ভাল-মন্দ কাজ-কর্মের প্রকৃত ফলাফল পাওয়ার স্থান নয়; বরং এটি হল কর্মস্থল; কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনের জায়গা। যথার্থ প্রতিদান বা পুরস্কার গ্রহণেরও স্থান এটা নয়। এতে একথাও বুঝা যাচ্ছে যে, পৃথিবীতে কারও অর্থ-সম্পদের আধিক্য ও সুখ-শান্তির ব্যাপকতা দেখে বলা যাবে না যে, এ লােক আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছেন বা তিনি আল্লাহর প্রিয়পাত্র। অপর পক্ষে কাকেও বিপদাপদে পতিত দেখেও বলা যাবে না যে, তিনি আল্লাহর অভিশপ্ত। যেমনি করে কর্মস্থলে বা কারখানার কোন কোন লােককে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে ব্যস্ত দেখে কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি তাকে বিপদগ্রস্ত বলে ভাবে না; বরং সে এ ব্যস্ততাকে জীবনের সাফল্য বলেই গণ্য করে এবং যদি কেহ অনুগ্রহ করে তাকে এ ব্যস্ততা থেকে রেহাই দিতে চায়, তবে তাকে সে সবচেয়ে বড় ক্ষতি বলে মনে করে। সে তার এ ত্রিশ দিনের পরিশ্রমের অন্তরালে এমন এক আরাম দেখতে পায়, যা তার বেতনম্বরূপ সে লাভ করে।

    এ জন্যই নবীগণ এ দুনিয়ার জীবনে সর্বপেক্ষা বেশী বিপদাপদে পতিত হয়েছেন এবং তারপর ওলী-আওলিয়াগণ সবচেয়ে অধিক বিপদে পতিত হন। কিন্তু দেখা গেছে, বিপদের তীব্রতা যত কঠিনই হােক না কেন, দৃঢ়পদে তারা তা সহ্য করেছেন। এমনকি আনন্দিত চিত্তেই তারা তা মেনে নিয়েছেন। মােটকথা, দুনিয়ার আরাম আয়েশকে সত্যবাদিতা ও সঠিকতা এবং বিপদাপদকে খারাপ কাজের নিদর্শন বলা যায় না।

অবশ্য কখনাে কোন কোন কর্মের সামান্য ফলাফল দুনিয়াতেও প্রকাশ করা হয় বটে, তবে তা সেকাজের পূর্ণ বদলা হতে পারে না। এগুলাে সাময়িকভাবে সতর্ক করার জন্য একটু নিদর্শন মাত্র।

 বাক্যটিতে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এই যে, বুদ্ধিমান ব্যক্তিমাত্রই একথা জানেন যে, সেই একক সত্তাই প্রকৃত মালিক, যিনি সমগ জগতকে সৃষ্টি করেছেন এবং এর লালন-পালন ও বর্ধনের আমি গ্রহণ করেছেন এবং যাঁর মালিকানা পূর্ণরূপে প্রত্যেক বস্তুর মধ্যেই সর্বাবস্থায় পরিব্যাপ্ত। অর্থাৎ— প্রকাশ্যে, গোপনে, জীবিতাবস্থায় ও মৃতাবস্থায় এবং যার মালিকানার আরম্ভ নেই, শেষও নেই। এ মালিকানার সাথে মানুষের মালিকানা তুলনাযোগ্য নয়।কেননা, মানুষের মালিকানা আরম্ভ ও শেষের চৌহদ্দীতে সীমাবদ্ধ। এক সময় তা ছিল না কিছুদিন পৱেই তা থাকবে না। অপরদিকে মানুষের মালিকানা হস্তান্তরযােগ্য। বস্তুর বাহ্যিক দিকের উপরই বর্তায়; গােপনীয় দিকের ওপর নয়। জীবিতের ওপর; মৃতের ওপর নয়। এজন্যই প্রকৃত প্রস্তাবে আল্লাহ তা‘আলার মালিকানা কেবলমাত্র প্রতিদান দিবসেই নয়, বরং পৃথিবীতেও সমস্ত সৃষ্টজগতের প্রকৃত মালিক অল্লাহ তাআলা। তবে এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার মালিকানা বিশেষভাবে প্রতিদান দিবসের এ কথা বলার তাৎপর্য কি? আল-কোরআনের অন্য আয়াতের প্রতি লক্ষ করলেই বােঝা যায় যে, যদিও দুনিয়াতেও প্রকৃত মালিকানা আল্লাহ তা‘আলারই, কিন্তু তিনি দয়াপরবশ হয়ে আংশিক বা ক্ষণস্থায়ী মালিকানা মানবজাতিকেও দান করেছেন এবং পার্থিব জীবনের আইনে এ মালিকানার প্রতি সম্মানও দেখানাে হয়েছে। বিশ্বচরাচরে মানুষ ধন-সম্পদ, জায়গা-জমি, বাড়ী-ঘর এবং আসবাবপত্রের ক্ষণস্থায়ী মালিক হয়েও এতে একেবারে ডুৰে রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা  একথা ঘােষণা করে এ অহংকারী ও নির্বোধ মানব-সমাজকে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, তােমাদের এ মালিকানা, আধিপত্য ও সম্পর্ক মাত্র কয়েক দিনের এবং ক্ষণিকের। এমন দিন অতি সত্বরই আসছে, যে দিন কেউই জাহেরী মালিকও থাকবে না, কেউ কারাে দাস বা কেউ কারাে সেবা পাবার উপযােগীও থাকবে না। সমস্ত বস্তুর মালিকানা এক ও একক সত্তার হয়ে যাবে। |

সূরা আল-ফাতিহার প্রথমে বর্ণনা করা হয়েছে যে, এ সূরার প্রথম তিনটি আয়াতে আল্লাহর প্রশংসা ও তারীফের বর্ণনা করা হয়েছে এবং এর তফসীরে একথা সুস্পষ্ট হয়েছে যে, তা’রীফ ও প্রশংসার সাথে সাথে ঈমানের মৌলিক নীতি ও আল্লাহর একত্ববাদের বর্ণনাও সূক্ষ্মভাবে দেয়া হয়েছে।

      তৃতীয় আয়াতের তফসীরে আপনি অবগত হলেন যে, এর দু’টি শব্দে তারীফ ও প্রশংসার সাথে সাথে ইসলামের বিপ্লবাত্মক মহােত্তম আকীদা যথা কিয়ামত ও পরকালের বর্ণনা প্রমাণসহ উপস্থিত করা হয়েছে।

   এখন চতুর্থ আয়াতের বর্ণনাঃ  এ আয়াতের এক অংশে তা’রীফ ও প্রশংসা এবং অপর অংশে দোয়া ও প্রর্থনা।  শব্দ থেকে গঠিত। এর অর্থ হচ্ছে। কারাে প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা ও ভালবাসার দরুন তাঁর নিকট নিজের আন্তরিক কাকুতি-মিনতি প্রকাশ করা।   হতে গঠিত। এর অর্থ হচ্ছে কারাে সাহায্য প্রার্থনা করা। আয়াতের অর্থ হচ্ছে, আমরা তােমারই ইবাদত করি এবং একমাত্র তােমার নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করি। মানবজীবন তিনটি অবস্থায় অতিবাহিত হয়। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত। পূর্বের তিনটি আয়াতের মধ্যে  এবং  এ দু’টি আয়াতে মানুষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, অতীতে সে কেবল মাত্র আল্লাহ তাআলার মুখাপেক্ষী ছিল, বর্তমানেও সে একমাত্র তাঁরই মুখাপেক্ষী। অস্তিত্বহীন এক অবস্থা থেকে তিনি অস্তিত্ব দান করেছেন।

 

      আজ সকল সকল সৃষ্টির মধ্যে সর্বাপেক্ষা সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর আকার-আকৃতি, বিবেক ও বুদ্ধি দান করেছেন। বর্তমানে তার লালন-পালন ও ভরণ-পোষণের নিয়মিত সুব্যবস্থাও তিনিই করেছেন। অতঃপর -এর মধ্যে জানিয়ে নেয়া হয়েছে যে, ভবিষ্যতেও সে আল্লাহ্ তা‘আলারই মুখাপেক্ষী। প্রতিদান দিবসে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো সাহায্য পাওয়া যাবে না। ভবিষ্যতেও সে আল্লাহ তাআলারই মুখপেক্ষী। প্রতিদান দিবসে আলাহ আনীত অন্য কারাে সাহায্য পাওয়া যাবে না।

       প্রথম তিনটি আয়াত দ্বারা যখন একথা প্রমাণিত হলাে যে, মানুষ তার জীবনের তিনটি কালেই একান্তভাবে  আল্লাহর মুখাপেক্ষী, তাই সাধারণ মুক্তির চাহিদাও এই যে, ইবাদতও তাঁরই করতে হবে। কেননা, ইবাদত যেহেতু অশেষ শ্রদ্ধা ও ভালােবাসার সাথে নিজের অফুরন্ত কাকুতি-মিনতি নিবেদন করার নাম, সুতরাং তা পাওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন অন্য কোন সত্তা নেই। ফলকথা এই যে, একজন বুদ্ধিমান ও বিবেকবান ব্যক্তি মনের গভীরতা থেকেই এ স্বতঃস্ফূর্ত স্বীকৃতি উচ্চারণ করছে যে, আমরা তোমাকে ব্যতীত অন্য কারাে ইবাদত করি না। এ মৌলিক চাহিদাই  তে বর্ণনা করা হয়েছে।

         

        যখন স্থির হলাে যে, অভাব পূরণকারী একক সত্তা আল্লাহ্ তা'আলা, সুতরাং নিজের যাবতীয় কাজে সাহায্যও তাঁর নিকটই প্রার্থনা করবে। এ মৌলিক চাহিদারই বর্ণনা  করা হয়েছে। মােটকথা, এ চতুর্থ আয়াতে একদিকে আল্লাহ্-র  তা‘রীফ ও প্রশংসার সাথে একথারও স্বীকৃতি রয়েছে যে, ইবাদত ও শ্রদ্ধা পাওয়ার একমাত্র তিনিই যােগ্য। অপরদিকে তাঁর নিকট সাহায্য ও সহায়তার প্রার্থনা করা এবং তৃতীয়তঃ আলহ ব্যতীত অন্য কারাে ইৰাদত না করার শিক্ষাও দেয়া হয়েছে। এতদসঙ্গে এও বলে দেয়া হয়েছে যে, কোন বান্দাই আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাকেও অভাব পূণকারী মনে করবে না। অপর কারাে নিকট প্রার্থনার হাত প্রসারিত করা যাবে না। অবশ্য কোন নবী বা কোন ওলীর বরাত দিয়ে প্রার্থনা করা আয়াতের মর্মবিরােধী নয়।

       এ আয়াতে এ বিষয়ও চিন্তা করা কর্তব্য যে, ‘আমরা তােমারই দিক সাহায্য চাই।‘ কিন্তু কোন্ কাজের সাহায্য চাই, তার কোন উল্লেখ নে। জ‘মহুর মুফাসসিরীনের অভিমত এই যে, নির্দিষ্ট কোন ব্যাপারে সাহায্যের উল্লেখ না করে আ’ম ৰা সাধারন সাহায্যের প্রতি ইশারা করা হয়েছে যে, আমি আমার ইবাদত এবং প্রত্যেক ধর্মীয় ও পার্থিব কাজে এবং অন্তরে পোষিত প্রতিটি আশা-আকাঙ্খায় কেবল তােমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।

     শুধু নামায রোযারই নাম ইবাদত নয়। ইমাম গাযযালী স্বীয় গ্রন্থ আরবাইন-এ দশ প্রকার ইবাদতের কথা লিখেছেন। যথা - নামায, যাকাত, রোযা, কোরআন তিলাওয়াত, সর্বাবস্থায় আল্লাহর স্মরণ, হালাল উপার্জনের চেষ্টা করা, প্রতিবেশী এবং সাথীদের প্রাপ্য পরিশােধ করা, মানুষকে সৎ কাজের আদেশ ও খারাপ কাজ হতে বিরত থাকার উপদেশ দেয়া, রসূলের সুন্নত পালন করা।

   একই কারণ ইবাদতে আল্লাহর সাথে কাকেও অংশীদার করা চলে না। এর অর্থ হচ্ছে, কারো প্রতি ভালবাসা, আল্লাহর প্রতি ভালবাসার সমতুল্য হবে না। কারো প্রতি ভয়,  কারো তার আশা-আকাঙ্খা পোশণ আল্লাহ্র ভয় ও তাঁর প্রতি পোশিত আশা-আকাঙ্খার সমতুল্য হবে না। আবার কারাে ওপর একান্ত ভরসা করা, কারাে আনুগত্য ও খেদমত করা, কারো কাজকে আল্লাহর ইবাদতের সমতুল্য আবশ্যকীয় মনে করা, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারাে নামে মানত করা, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারাে সামনে স্বীয় কাকুতি-মিনতি প্রকাশ করা এবং যে কাজে অন্তরের আবেগ-আকুতি প্রকাশ পায়, এমন কাজ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারাে জন্য করা- যথা রুকূ বা সেজদা করা ইত্যাদি কোন অবস্থাতেই বৈধ হবে না।

        শেষ তিনটি আয়াতে মানুষের দোয়া ও আবেদনের বিষয়বস্তু এবং এক বিশেষ প্রার্থনাপদ্ধতি শিক্ষা দেয়া হয়েছে। তা হচ্ছে —

 

        অর্থাৎ, 'আমাদিগকে সরল পথ দেখাও, সে সমস্ত মানুষের পথ, যারা তােমার অনুগ্রহ লাভ করেছে। যে পথে তােমার অভিশপ্ত বান্দারা চলেছে সে পথ নয় এবং ঐ সমস্ত লােকের রাস্তাও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।’

 

        এ তিনটি আয়াতে কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। যেমন, সরল পথের হেদায়েতের জন্য যে আবেদন এ আয়াতে শিক্ষা দেয়া হয়েছে, এর আবেদনকারী যেমনিভাবে সাধারণ মানুষ, সাধারণ মুমিনগণ, তেমনি আওলিয়া, গাউস-কুতুব এবং নবী-রসূলগণও বটে। নিঃসন্দেহে যাঁরা হেদায়েত প্রাপ্ত, বরং অন্যের হেদায়েতের উৎসস্বরূপ, তাঁদের পক্ষে পুনরায় সে হেদায়েতের জন্যই বারংবার প্রার্থনা করার উদ্দেশ্য কি ? এ প্রশ্নের উত্তর হেদায়েত শব্দের তাৎপর্য পরিপূর্ণরূপে অনুধাবন করার ওপর নির্ভরশীল।

       ইমাম রাগেব ইস্-ফাহানী ‘মুফরাদাতুল-কোরাআনে’ হেদায়েত শব্দের অতি সুন্দর ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। এর সারমর্ম হচ্ছে- ‘কাউকে গন্তব্যস্থানের দিকে অনুগ্রহের সাথে পথ প্রদর্শন করা। তাই হেদায়েত করা প্রকৃত প্রস্তাবে একমাত্র আল্লাহ তা'আলারই কাজ এবং এর বিভিন্ন স্তর রয়েছে। হেদায়েতের একটি স্তর হচ্ছে সাধারণ ও ব্যাপক। এতে সমগ্র সৃষ্টি অন্তর্ভুক্ত। জড়পদার্থ, উদ্ভিদ এবং প্রাণী জগৎ পর্যন্ত এর আওতাধীন। প্রসঙ্গতঃ প্রশ্ন উঠতে পারে যে, প্রাণহীন জড়পদার্থ বা ইতর প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের সঙ্গে হেদায়েতের সম্পর্ক কোথায় ?

        কোরআনের শিক্ষায় স্পষ্টতঃই এ তথ্য ব্যক্ত হয়েছে যে, সৃষ্টির প্রতিটি স্তর, এমনকি প্রতিটি অণু-পরমাণু পর্যন্ত নিজ নিজ অবস্থানুযায়ী প্রাণ ও অনুভূতির অধিকারী। স্ব-স্ব পরিমণ্ডলে প্রতিটি বস্তুর বুদ্ধি-বিবেচনা রয়েছে। অবশ্য এ বুদ্ধি ও অনুভূতির তারতম্য রয়েছে। কোনটাতে তা স্পষ্ট এবং কোনটাতে নিতান্তই অনুল্লেখ্য।  যে সমস্ত বস্তুতে তা অতি অল্পমাত্রায় বিদ্যমান সেগুলােকে প্রাণহীন বা অনুভূতিহীন বলা যায়। বুদ্ধি ও অনুভূতির ক্ষেত্রে এ তারতম্যের জন্যই সমগ্র সৃষ্টিজগতের মধ্যে একমাত্র মানুষ ও জ্বিন জাতিকেই শরীয়তের হুকুম-আহকামের আওতাভূক্ত করা হয়েছে। কারণ, সৃষ্টির এ দু'টি স্তরের মধ্যেই বুদ্ধি ও অনুভূতি পূর্ণ মাত্রায় দেয়া হয়েছে। কিন্তু, তাই বলে একথা বলা যাবে না যে, একমাত্র মানুষ ও জ্বিন জাতি ছাড়া সৃষ্টির অন্য কোন কিছুর মধ্যে বুদ্ধি  ও অনুভূতির অস্তিত্ব নেই। কেননা, আল্লাহ তা আল্য এরশাদ করেছেনঃ

 

 

      অর্থাৎ- এমন কোন বস্তু নেই যা আল্লাহর প্রশংসার তসবীহ পাঠ করে না, কিন্তু তােমরা তাদের তসবীহ বুঝতে পার না। (সূরা বন-ইসরাঈল)

       সূরা নূরে এরশাদ হয়েছে।

 

 

      অর্থাৎ, – 'তােমরা কি জান না যে, আসমান-জমিনে যা কিছু রয়েছে, সকলেই আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা ও গুণগান করে ? বিশেষতঃ পাখীকুল যারা দু’পাখা বিস্তার করে শূন্যে উড়ে বেড়ায়, তাদের সকলেই স্ব-স্ব দোয়া তসবীহ সম্পর্কে জ্ঞাত এবং আল্লাহ্ তা'আলাও ওদের তসবীহ সম্পর্কে খবর রাখেন।'

     একথা সর্বজনবিদিত যে, আল্লাহ তা`আলার পরিচয়ের ওপরই তাঁর তারীফ ও প্রশংসা নির্ভরশীল। আর এ কথাও স্বতঃসিদ্ধ যে, আল্লাহর পরিচয় লাভ করাই সর্বাপেক্ষা বড় জ্ঞান। এটা বুদ্ধি-বিবেক ও অনুভূতি ব্যতীত সম্ভব নয়। কোরআনের অন্যান্য আয়াত দ্বারাও প্রমাণিত হয়েছে যে, সৃষ্টিজগতের প্রতিটি বস্তুরই প্রাণ ও জীবন আছে এবং বুদ্ধি ও অনুভূতি রয়েছে। তবে কোন কোনটির মধ্যে এর পরিমাণ এত অল্প যে, সাধারণ দৃষ্টিতে তা অনুভব করা যায় না। তাই পরিভাষাগতভাবে ওগুলােকে প্রাণহীন ও বুদ্ধিহীন জড়পদার্থ বলা হয়। আর এ জন্যেই ওদেরকে শর`য়ী আদেশের আওতাভুক্ত করা হয়নি। গােটা বস্তুজগত সম্পর্কিত এ মীমাংসা আল-কোরআনে সে যুগেই দেয়া হয়েছিল, যে যুগে পৃথিবীর কোথায়ও আধুনিক-কালের কোন দার্শনিকও ছিল না, দর্শনবিদ্যার কোন পুস্তকও রচিত হয়নি। পরবর্তী যুগের দার্শনিকগণ এ তথ্যের যথার্থতা স্বীকার করেছেন এবং প্রাচীন দার্শনিকদের মধ্যেও এ মত পােষণ করার মত অনেক লােক ছিল। মােটকথা, আল্লাহর হেদায়েতের এ প্রথম স্তরে। সমস্ত সৃষ্টিজগত— যথা–জড় পদার্থ, উদ্ভিদ, প্রাণীজগৎ, মানবমন্ডলী ও জ্বিন প্রভৃতি সকলেই অন্তর্ভুক্ত। এ সাধারণ হেদায়েতের উল্লেখই আল-কোরআনের  আয়াতে করা হয়েছে।

       অর্থাৎ, যিনি সমস্ত সৃষ্টিজগতের জন্য বিশেষ অভ্যাস এবং বিশেষ বিশেষ দায়িত্ব নির্ধারণ করেছেন এবং সে মেযাজ ও দায়িত্বের উপযােগী হেদায়েত দান করেছেন। এ ব্যাপারে হেদায়েতের পরিকল্পনা অনুযায়ী সৃষ্টিজগতের প্রতিটি বস্তুই অতি নিপুণভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে চলেছে। যে বস্তুকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, সে সেই কাজ অত্যন্ত গরুত্ব ও নৈপূণ্যের সাথে পালন করছে। যথা – মুখ হতে নির্গত শব্দ নাক বা চক্ষু কেউই শ্রবণ করতে পারে না, অথচ এ দু’টি মুখের নিকটতম অঙ্গ। পক্ষান্তরে এ দায়িত্ব আল্লাহ্ তা’আলা যেহেতু কানকে অর্পণ করেছেন, তাই একমাত্র কানই মুখের শব্দ শ্রবণ করে ও বোঝে। অনুরুপভাবে কান দ্বারা দেখা বা ঘ্রাণ নেওয়ার কাজ করা চলে না। 

 

হেদায়েতের দ্বিতীয় স্তর এর তুলনায় অনেকটা সংকীর্ণ। অর্থাৎ সে সমস্ত বস্তুর সাথে জড়িত, পরিভাষায় যাদেরকে বিবেকবান বুদ্ধিসম্পন্ন বলা হয়। অর্থাৎ – মানুষ এবং জ্বিন জাতি।  এ হেদায়েত নবী-রাসুল ও আসমানী কিতাবের মাধ্যমে প্রত্যেক মানুষের নিকট পৌছেছে। কেউ এ হেদায়েতকে গ্রহণ করে মুমিন হয়েছে আবার কেউ একে প্রত্যাখান করে কাফির- বে-দ্বীনে পরিণত হয়েছে।

     হেদায়েতের তৃতীয় স্তর আরো বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। তা শুধু মু’মিন ও মুত্তাকী বা ধর্মভীরুদের জন্য। এ হেদায়েত আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে কোন প্রকাশ মাধ্যম ব্যতীতই মানুষকে প্রদান করা হয়। এরই নাম তওফীক । অর্থাৎ, এমন অবস্থা, পরিবেশ ও মনােভাব সৃষ্টি করে দেয়া যে, তার ফলে কোরআনের হেদায়েতকে গ্রহণ করা এবং এর উপর আমল করা সহজসাধ্য হয় এবং এর বিরুদ্ধাচরণ কঠিন হয়ে পড়ে। এ তৃতীয় স্তরের পরিসীমা অতি ব্যাপক। এ স্তরই মানবের উন্নতির ক্ষেত্র। নেক- কজের সাথে এ হেদায়েতের বৃদ্ধি হতে থাকে । কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে এ বৃদ্ধির উল্লেখ রয়েছে ঃ

 

       অর্থাৎ – 'যারা আমার পথে অগ্রসর হওয়ার চষ্টা করে, আমি তাদেরকে আমার পথে আরাে অধিকতর অগ্রসর হওয়ার পর অবশ্যই দেখিয়ে থাকি।’ এটি সেই কর্মক্ষেত্র যেখানে নবী-রসূল এবং বড় বড় ওলী-আওলিয়া, কুতুবগণকেও জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আরো অধিকতর হেদায়েত ও তওফীকের জন্য চেষ্টায় রত থাকতে দেখা গেছে।

        হেদায়েতের এ ব্যাখ্যার দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝা গেল যে, হেদায়েত এমন এক বন্তু যা সকলেই লাভ করেছে এবং এর আধিক্য লাভ করার জন্য বড় হতে বড় ব্যক্তির পক্ষেও কোন বাধা-নিষেধ নেই। এজন্যই সূরা আল-ফাতেহায় গুরুত্বপূর্ণ দোয়ারূপে হেদায়েত প্রার্থনা শিক্ষা দেয়া হয়েছে। যা একজন সাধারণ মুমিনের জন্যও উপযোগী, আবার একজন বড় হতে বড় রসূলের জন্যও উপযোগী। এজন্যই হযরত রসূলে আকরাম (সাঃ)-এর শেষ জীবনে সূরা ফাতাহ্তে মক্কা বিজয়ের ফলাফল বর্ণনা করতে গিয়ে একথাও বলা হয়েছে যে,


       অর্থাৎ, মক্কা বিজয় এজন্যই আপনার দ্বারা সম্পন্ন করা হয়েছে, যাতে সিরাতে-মুস্তাকীমের হেদায়েত লাভ হয়।

       রসূলুল্লাহ (সাঃ) কেবল নিজেই হেদায়েতপ্রাপ্ত ছিলেন না; বরং অন্যের জন্যও ছিলেন হেদায়েতের উৎস। এমতাবস্থায় তাঁর হেদায়েত লাভের একমাত্র অর্থ হতে পারে, এ সময় হেদায়েতের কোন উচ্চতর অবস্থা তিনি লাভ করেছেন।

       হেদায়েতের এ ব্যাখ্যা পবিত্র কোরআন বুঝবার ক্ষেত্রে যে সব ফায়দা প্রদান করবে সংক্ষেপে তা নিম্নরূপঃ

(এক) পবিত্র কোরআনের কোথাও কোথাও মুমিন ও কাফের নির্বিশেষে সবার জনাই হেদায়েত শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। আবার কোথাও শুধুমাত্র মুত্তাকীদের জন্য বিশেষ অর্থে হেলায়েত শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এতেকরে অজ্ঞ লোকদের পক্ষে সন্দেহে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় কিন্তু হেদায়েতের সাধারণ ও বিশেষ স্তরসমুহ জানার পর এ সন্দেহ আপন-আপনিতেই দূরীভূত হয়ে যাবে। বুঝতে হবে যে, করো বেলায় ব্যাপক অর্থে এবং কারো বেলায় বিশেষ অর্থে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।

 

       (দুই) আল-কোরআনের বিভিন্ন স্থানে এরশাদ হয়েছে যে, যালেম ও ফাসেকদিগকে আল্লাহ্ তা‘আলা হেদায়েত দান করেন না। অন্যত্র বারবার এরশাদ হয়েছে যে, তিনি সকলকেই হেদায়েত দান করেন। এর উত্তরও হেদায়েতের স্তরসমূহের বর্ণনা প্রসঙ্গে বলে দেয়া হয়েছে যে, হেদায়েতের ব্যাপক অর্থে সকলেই হেদায়েপ্রাপ্ত এবং বিশেষ অর্থে জালেম ও ফাসেকরা বাদ পড়েছে।

          (তিন) হেদায়েতের তিনটি স্তরের মধ্যে প্রথম ও তৃতীয় স্তর সরাসরি আল্লাহ তা'আলার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ পর্যায়ের হেদায়েত একান্তভাবে একমাত্র তাঁরই কাজ। এতে নবী-রসূলগণেরও কোন অধিকার নেই। নবী-রসূলগণের কাজ শুধু হেদায়েতের দ্বিতীয় স্তরে সীমিত। কোরআনের যেখানে যেখানে নবী-রসূলগণকে হেদায়েতকারী বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তা হেদায়েতের দ্বিতীয় স্তরের ভিত্তিতেই বলা হয়েছে। আর যেখানে এরশাদ হয়েছে :

    অর্থাৎ, আপনি যাকে চাইবেন তাকেই হেদায়েত করতে পারবেন না – এতে হেদায়েতের তৃতীয় স্তরের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ, কাউকে তওফীক দান করা আপনার কাজ নয়।

       মােটকথা ,  একটি ব্যাপক ও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দোয়া, যা মানুষকে শিক্ষা দেয়া হয়েছে। মানবসমাজের কোন ব্যক্তিই এর আওতার বাইরে নেই। কেননা, সরল-সঠিক পথ ব্যতীত দ্বীন-দুনিয়া কোনটিরই উন্নতি ও সাফল্য সম্ভব নয়। দুনিয়ার আবর্তন-বিবর্তনের মধ্যেও সিরাতে-মুস্তাকীমের প্রার্থনা পরশপাথরের ন্যায়, কিন্তু মানুষ তা লক্ষ্য করে না। আয়াতের অর্থ হচ্ছে  — ‘আমাদিগকে সরল পথ দেখিয়ে দিন।`

     সরল পথ কোনটি? ‘সােজা সরল রাস্তা’ সে পথকে বলে, যাতে কোন মােড় বা ঘােরপ্যাঁচ নেই। এর অর্থ হচ্ছে, ধর্মের সে রাস্তা যাতে ‘ইফরাত বা ‘তফরীত এর-অবকাশ নেই। ইফরাতের অর্থ সীমা অতিক্রম করা এবং তফরীত অর্থ মর্জিমত কাট-ছাট করে নেয়া। এরশাদ হয়েছে ঃ

     অর্থাৎ, যে সকল লােক আপনার অনুগ্রহ লাভ করেছে তাদের রাস্তা। যে সকল ব্যক্তি আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করেছে, তাদের পরিচয় অন্য একটি আয়াতে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছেঃ

      অর্থাৎ – যাদের প্রতি আল্লাহ্ পাক অনুগ্রহ করেছেন, তাঁরা হচ্ছেন, নবী, সিদ্দীক, শহীদ এবং সৎকর্মশীল সালেহীন। আল্লাহ্‌র দরবারে মকবুল উপরােক্ত লােকদের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তর নবীগণের। অতঃপর নবীগণের উম্মতের মধ্যে যাঁরা সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী, তাঁরা হলেন সিদ্দীক। যাদের মধ্যে রূহানী কামালিয়াত ও পরিপূর্ণতা রয়েছে, সাধারণ ভাষায় তাদেরকে ‘আওলিয়া’ বলা হয়। আর যাঁরা দ্বীনের প্রয়োজনে স্বীয় জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করেছেন, তাঁদেরকে বলা হয় শহীদ। আর সালেহীন হচ্ছেন যাঁরা ওয়াজীব মুস্তাহব প্রভুতি সর্বক্ষেত্রে শরীয়তের পুরোপুরি অনুসরণ ও আমলকারী। সাধারণ পরিভাষায় এঁদেরকে দ্বীনদার বলা হয়।

 

     এ আয়াতের প্রথম অংশে ইতিবাচক বাক্য ব্যবহার করে সরল পথের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। উপরোক্ত চার স্তরের মানুষ যে পথ চলেছেন তাই সরল পথ। পরে শেষ  আয়াতে নেতিবাচক বাক্য ব্যবহার করেও এর সমর্থন করা হয়েছে। বলা হয়েছে ঃ

 

         অর্থাৎ, যারা আপনার অভিসম্পতগ্রস্ত তাদের পথ নয় এবং তাদের পথও নয়, যারা পথহারা হয়েছে।

 বলতে ঐ সকল লােককে বুঝানাে হয়েছে, যারা ধর্মের হুকুম-আহ্কামকে বুঝে-জানে, তবে স্বীয় অহমীকা ও ব্যক্তিগত স্বার্থের বশবর্তী হয়ে বিরুদ্ধাচরণ করেছে। যাঁরা আল্লাহ্ তা‘আলার আদেশ মান্য করতে গাফলতি করেছে। যেমন, সাধারণভাবে ইহুদীদের নিয়ম ছিল, সামান্য স্বার্থের জন্য দ্বীনের নিয়ম নীতি বিসর্জন দিয়ে তারা নবী-রসূলগণের অবমাননা পর্যন্ত করতে দ্বিধাবােধ করত না।

  - তাদেরকে বলা হয়, যারা না বুঝে অজ্ঞতার দরুন ধর্মীয় ব্যাপারে ভুল পথের অনুসারী হয়েছে এবং ধর্মের সীমালম্বন করে অতিরঞ্জনের পথে অগ্রসর হয়েছে। যথা-নাসারাগণ। তারা নবীর শিক্ষাকে অগ্রাধিকার প্রদানের নামে এমনি বাড়াবাড়ি করেছে যে, নবীদিগকে আল্লাহর স্থানে উন্নীত করে দিয়েছে। ইহুদীদের বেলায় এটা অন্যায় এজন্য যে, তারা আল্লাহ্-র নবীদের কথা মানেনি; এমনকি তাঁদেরকে হত্যা পর্যন্ত করেছে। অপরদিকে নাসারাগণের বেলায় অতিরঞ্জন হচ্ছে এই যে, তারা নবীদিগকে আল্লাহর পর্যায়ে পৌছিয়ে দিয়েছে।

আয়াতের সারমর্ম হচ্ছে- আমরা সে পথ চাই না, যা নফসানী উদ্দেশের অনুগত হয় এবং মন্দ কাজে উদ্বুদ্ধ করে ও ধর্মের মধ্যে সীমালঙ্ঘনের প্রতি প্ররােচিত করে। সে পথও চাই না, যে পথ অজ্ঞতা ও মুর্খতার দরুন ধর্মের সীমারেখা অতিক্রম করে এবং এ দু‘য়ের মধ্যবর্তী সােজা-সরল পথ চাই যার মধ্যে না অতিরঞ্জন আছে, আর না কম-কছুরী আছে এবং যা নফসানী প্রভাব ও সংশয়ের উর্ধ্বে।

সূরা আল-ফাতেহার আয়াত সাতটির তফসীর শেষ হয়েছে। এখন সমগ্র সূরার সারমর্ম হচ্ছে এই দোয়া- ‘হে আল্লাহ্! আমাদিগকে সরল পথ দান করুন। কেননা, সরল পথের সন্ধান লাভ করাই সবচাইতে বড় জ্ঞান ও সর্বাপেক্ষা বড় কামিয়াবী। বস্তুতঃ সরল পথের সন্ধানে ব্যর্থ হয়েই দুনিয়ার বিভিন্ন জাতি ধ্বংস হয়েছে। অন্যথায় অ-মুসলমানদের মধ্যেও সৃষ্টিকর্তার পরিচয় লাভ করা এবং তাঁর সন্তুষ্টির পথ অনুসরণ করার আগ্রহ-আকৃতির অভাব নেই। এজন্যই কোরআন পাকে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় পদ্ধতিতেই সিরাতে-মুস্তাকীমের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে।

 

তথ্যসূত্র ঃ


More articles you may like







© 2018-2024 Privacy Policy  
        FAQ | Help | Contact